প্রসঙ্গ -মারজুক রাসেল ও তার বই 'দেহবন্টন বিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর "


"কবিতা যারে খায়, প্লেট -সুদ্ধা খায়"

কিংবা, 

"কবিতা পৃথিবীর সমস্ত কিছুকে গ্রাস করে"


- মারজুক রাসেল

 

কবিতা কি?


উইকিপিডিয়া ঘাটলে পাওয়া যায়,


"কবিতা, কাব্য বা পদ্য হচ্ছে শব্দ প্রয়োগের ছান্দসিক কিংবা অনিবার্য ভাবার্থের বাক্য বিন্যাস--- যা একজন কবির আবেগ-অনুভূতি, উপলব্ধি ও চিন্তা করার সংক্ষিপ্ত রুপ এবং তা অতি অবশ্যই উপমা-উৎপ্রেক্ষা-চিত্রকল্পের সাহায্যে আন্দোলিত সৃষ্টির উদাহরণ।"


সংজ্ঞায় কোথাও নেই -কবিতা দুর্বল। কবিতা করুণা'র।কবিতা চাঁদের আলোর মত স্নিগ্ধ।অথচ, বেশির ভাগ মানুষ কবিতা'কে নিয়ে এরকম ভ্রান্ত ধারণা করেন।

কবিতা সূর্যের মত কঠোর হতে পারে, সেটা মারজুকের এ দুটো বাক্য থেকে বোঝা যায় ভালো ভাবেই।


আমরা যারা মারজুকের খ্যাতি নিয়ে প্রশ্ন করি,জোর করে তথাকথিত ইউটিউবারদের মত মৌসুমি বাংলিশ বই বের করা সেলিব্রেটিদের কাতারে ফেলে দেই, তাদের জানা উচিত, এরকম বাক্য ভেতর থেকে আসতে হলে কবিসত্তার ভিত্তি শক্ত  হতে হয়।মারজুক রাসেল একটা ভিত্তি তৈরি করে এ পর্যায়ে এসেছেন।এটা রাতারাতি হয়নি।কবিতা'কে নিয়ে বসবাস, কবিতাকে নিয়ে জীবন কাটানো, স্বপ্ন দেখা, কবিতার জন্য নিজেকে বারবার ভেঙে চুরে গড়ে তোলা-এটা মারজুকের পক্ষে সম্ভব।


এজন্য মারজুক যখন বলেন, কবিতা গ্রাস করে সবকিছু, সেটা তাৎপর্যপূর্ণভাবেই গ্রাস করা বুঝায়। 

কবিতা দুর্বল না, কবিতা শক্তিশালী।কবিতা করুণা'র জিনিস না। উপরের দুটো লাইনে এটা মারজুক ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছেন।


মারজুকের পাগলামি কিংবা উদ্ভট জীবন যাপন, তার কবিতা'র প্রধান অস্ত্র।

অশ্লীলতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেন।কবিতায় যৌনতা নিয়ে আপত্তি আছে অনেকেরই।


কিন্তু, কবিতা যেহেতু জীবনের প্রতিনিধিত্ব করে,

আর যৌনতা জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ, সেহেতু, কবিতায় যৌনতা'কে এড়িয়ে যাওয়া মানে জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ কে এড়িয়ে যাওয়া। মারজুক এড়িয়ে যাননি।

বরং,  যৌনতাকে  কতটা নান্দনিকতার সাথে শৈল্পিক আকারে প্রকাশ করা যায়, সেটা মারজুকের কবিতায় স্পষ্ট।


"দেহবন্টন বিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর" বইয়ে মারজুকের একেকটা কবিতা,  যৌনতাকে নান্দনিকতার সাথে প্রকাশের একটা সফল রূপ বলা যায়।


"তুমি সংবাদ পড়ো,

আমরা তোমাকে  পড়ি"


"কোথায় যাচ্ছো?

-গোল্লায়।

........

গোল্লা আমাদের তীর্থস্থান"


"আঙুলের নোখ যেভাবে কাটলে সুবিধায় পড়ো,

বিষয় আমাকে বেশি বেশি সেই দ্বায়িত্ব দিয়েছে।"


কিংবা,

"পৃথিবীর সকল মানুষ না ঘুমালেও রাত হয়"


সহজ কথায় নান্দনিকতার এরকম  অনবদ্য প্রকাশ অহরহ স্থান পেয়েছে বইটি'তে।


কবিতাকে আকর্ষণীয় করার জন্য কিছু পাঞ্চলাইন দরকার হয়। আমার মনে হয়, মারজুকের কবিতার প্রত্যেকটা লাইনই একেকটা পাঞ্চলাইন।


বইটা পড়ে আরেকটি অনুভূতি শেয়ার করছি।

সেটা হলো, মারজুকের কবিতায় শব্দের তেজ অনেক।শব্দ নিয়ে খেলার যে একটা মজা, মারজুক সেটা কবিতায় তুলে ধরেছেন।আমিও একজন পাঠক হিসেবে সে মজাটা পেয়েছি। 


যেমন, 

"সময় লাগাচ্ছো? লাগাও"


"জিগাতলা কেনো? যেকারো তলায় যেতে আমি প্রস্তুত"


"উপহাসের পাত্র খুঁজছি আমরা; আমাদের সাথে ঘটক পাখি ভাইও রয়েছেন"


শব্দ নিয়ে খেলা -একটা নেশা। মারজুক এ নেশায় নেশাগ্রস্থ।নেশাগ্রস্থ কবি সব কিছু গ্রাস করে কবিতা দিয়ে।কবির প্রধান অস্ত্র কবিতা।

ধন্যবাদ।


সোহায়েব বিন ইসলাম সিয়াম 

Comments

Popular posts from this blog

তবু কেবলি দৃশ্যের জন্ম হয়

বাংলাদেশের নাটক শিল্পের বর্তমান অবস্থা ও আমার দৃষ্টিভঙ্গি

নির্বাসন (ছোটোগল্প, লেখা : সোহায়েব বিন ইসলাম সিয়াম)