তবু কেবলি দৃশ্যের জন্ম হয়

আমার জীবনে মাসুদের প্রভাব আছে অন্য রকমের। এত বছর পরেও ওর কথা, ওর চলাফেরা, ওর ভাবনা আমাকে এখনো আলোড়িত করে। যখন হুটহাট মা বাবা, ভাই বোন সবাইকে রেখে একা একা ছাদে চাঁদ দেখতে যাই, মাসুদ আমাকে ভাবায়। আমার কাছে সে এখনো রহস্যে ঘেরা, আমার কাছে সে এখনো এক বিস্ময়।


আপনাদেরও নিশ্চয়ই মাসুদকে নিয়ে জানতে আগ্রহ হচ্ছে তাই না? এভাবে ওকে কতটুকু তুলে ধরতে পারবো জানিনা। পৃথিবীর কাছে, তার চারপাশের কাছে মাসুদ হয়তো কেউ না, আমার কথা শুনেও হয়তো ভাববেন আমি একটু রং মাখিয়ে তাকে বড় করে তোলার চেষ্টা করছি। তবে আমি বিশ্বাস করতে চাই, আপনারা আমার আকুলতা একটু হলেও আঁচ করতে পারবেন।


মাসুদ তার ঘর থেকে খুব কম বের হতো। বন্ধু তেমন ছিলো না বললেই চলে। আমার সাথেই একটু হয়তো মন খুলে কথা বলতো। সারাদিন একা একা নিজের মত থাকতো, কাজ করতো। বাসার মানুষেরা তাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। তার ঘরটা ছিলো তার পৃথিবী। ওর বাসায় প্রায়ই যেতাম। ওর রুমে বসে আলাপ করতাম। ওর কথায় আমি অসাধারণত্ব খুঁজে পেতাম। মুগ্ধ হয়ে ওর কথা শুনতাম। একই ক্লাসে পড়া সত্ত্বেও তার চিন্তা ধারা অন্যরকম ছিলো। আমিই ছিলাম সম্ভবত ওর একমাত্র বন্ধু। আর কারো সাথে তেমন কথা বলতো না। বাসায় মা বাবা, ছোটো ভাই সবার সাথে কথা বলতো, মিশতো। তবে, নিজের রুমটাকে সে এমন ভাবে পৃথিবী বানিয়ে নিয়েছিলো, আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।


প্রথম যেদিন ওর রুমে যাই, ওর রুম দেখে চমকে গিয়েছিলাম। এত সুন্দর পেইন্টিং দেয়ালে ঝুলানো, সব নাকি ওর নিজের করা। এতটা ক্রিয়েটিভিটি ছিলো, আমি ওর রুমে যাওয়ার আগে কোনোদিন বুঝতে পারিনি। কলেজের সবচে অনুজ্জল ছেলেটা ছিলো মাসুদ। পড়াশোনায় খুব বেশি ভালো ছিলো না, আবার খুব বেশি খারাপও ছিলো না। শেষের বেঞ্চে একা একা বসতো। তার যেহেতু পুরো ক্লাসে কোনো বন্ধু ছিলোনা, সেহেতু তাকে শেষ বেঞ্চে সঙ্গ দেবার মত কেউ ছিলো না। মাসুদ একা জীবন বেছে নিয়েছিলো। ভুল বললাম, বেছে নিয়েছিলো? নাকি একাকিত্বের স্বীকার হয়েছিলো? আমি এ প্রশ্নের উত্তর আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম।


যে ছেলেটা কারো সাথে মিশতো না, পুরো ক্লাসে সবাই ওর নাম জানতো কিনা, সেটাও বলা কঠিন। কোনো এক কারণে, একটা বই নিতে ওর বাসায় যেতে হয়েছিলো আমাকে। বই নিতে গিয়েই আমি বিষ্ময়ে হতবাক। পুরো রুম জুড়ে পেইন্টিং, দেয়ালে পুরো সেলফ জুড়ে হাজার খানেক বই - এতসব দেখে আমি কথা বলতে পারিনি।


যখন বললো, সবগুলো বই তার পড়া, আমি হতভম্ব। যখন বললো, সবগুলো পেইন্টিং তার করা, আমি লজ্জিত। একটু লজ্জিত হলাম এই কারণে যে, এই ছেলেটাকে এতদিন এতটা অবহেলা করেছি, একটুও পাত্তা দিয়ে তার নামটাও জানতে চাইনি কত মাস। শুধু তো আমি এরকম তা না, ক্লাসের কেউই তাকে পাত্তা দেয়নি। অথচ এতটা হিডেন ট্রেজার যার ভেতরে, এতটা সমৃদ্ধি যার, এতটা শিল্পবোধ যার ভেতরে, তাকে এতদিম পাত্তা না দিয়ে আসায় ভেতরে ভেতরে একটু সংকুচিত হয়ে গেলাম।


জীবনানন্দ কে এঁকেছে এত নিখুঁত করে, মুগ্ধতা নিজ থেকেই আমার চোখে এসে ভর করে। একটা দুর্ভিক্ষের চিত্র দেখলাম। বেশ কজন নামি সাহিত্যিকদেরকে আঁকা দেখলাম। শেক্সপিওরকে ছাড়া অনেককেই চিনতে পারলাম না। তখনও সাহিত্যে অতটা ঝোক তৈরি হয়নি আমার। অল্প কিছু বই পত্র পড়তাম, সেই সূত্রে আমি নির্মলেন্দু গুন, রবীঠাকুর কে চিনতে পারলাম। লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চিকেও আঁকা দেখলাম।


আমি যেনো কোনো আর্ট মিউজিয়ামে ঢুকেছি এরকম বোঁধ করতে থাকলাম। একটা ছবিতে এসে ভয়ানক ভাবে চমকে গেলাম।


একটা লোক কান কেটে সেই কান তার হাতে ধরে আছে। মুখটা হাসি হাসি। পাশে অনেকগুলো পেইন্টিং এর সরঞ্জামাদি। উস্কো খুস্কো চুল। এই ছবি দেখে আমার পিলে চমকে উঠার মত অবস্থা হলো। জানতেও চাইলাম না, কে তিনি বা এই ছবির মানুষটা এরকম কেনো করেছে! তাড়াতাড়ি করে চোখ ঘুরিয়ে ওকে বললাম, এত বিদঘুটে ছবি তুমি কেনো এঁকেছো?


ও একটু মুচকি হাসলো। কিছু বললো না।


এত গুলো পেইন্টিং একদিনে দেখা সম্ভবও না। আপাতত এই কাজে ইস্তফা দিলাম। ওর কাছে যেজন্য এসেছিলাম, সেই বইটা চাইলাম। একটা উপন্যাস। পাওলো কোয়েলহো'র দ্যা আলকেমিস্ট। আমি যে খুব বেশি, সাহিত্য অনুরাগী ছিলাম, তা না । তবে এই বইটা নিয়ে অনেক এর মুখে শুনেছি বলে বইটা পড়ার ইচ্ছে জেগেছিলো। কি আছে এর ভেতরে, সেটা জানার জন্য আগ্রহ হচ্ছিলো মূলত। ক্লাসের বন্ধুদের সবাইকে জিগ্যেস করেছিলাম যে, কারো কাছে আছে কিনা। কি মনে করে, ওকেই হালকা ভাবে একটি জিগ্যেস করেছিলাম। ও বললো, আছে। প্রথমে ভাবলাম, মজা করছে। এই লাইফলেস ছেলের কাছে এই বই থাকবে? এ আবার বইও পড়ে? অনেক প্রশ্ন উকি দিয়েছিলো৷ তবে, খোঁজ নিয়ে জানলাম, বাসা নাকি আমার বাসার কাছেই। তাই এক বিকালে চলে এলাম ওর বাসায়, আর এসেই এইসব ব্যাপার দেখে আমি মোটামুটি স্তব্ধ।


দ্যা আলকেমিস্ট বইটা হাতে নিয়ে বের হতে যাবো এমন সময় ওর মা আমাকে জোর করে ডায়নিং টেবিলে বসালো, নাস্তা করালো। আন্টির মুখ খুশিখুশি।


আমাকে বললো, তুমি কি জানো বাবা? এই প্রথম ওর কোনো বন্ধু দেখলাম। বাসায় এর আগে কেউ আসেনি তুমি ছাড়া। ও কারো সাথে মিশতে চায়না। সারাদিন একটা রুমের ভিতরে বসে কিসব করে! তুমিই বলো, এসব করে কি জীবন চলে? মানুষের সাথে তো মিশতে হবে, চলতে হবে। তুমি এসেছো, আমার এত খুশি লাগছে।


কথাগুলো বলতে বলতে আন্টি কেঁদে ফেললো। আমি বুঝলাম, তার বাসায় সবকিছু স্বাভাবিক না। মাসুদকে নিয়ে ওর বাসায় যে সবাই টেনশন করে, এটাও আন্টির কথা শুনে বুঝতে পারলাম।


"একটা ছেলে মানুষের জীবন একটা ঘরে কাটতে পারে? একটা মানুষ কারো সাথে মিশতে চায়না। কিভাবে সে সামনের জীবনটা কাটাবে?আমরা সবাই মিলে কত বুঝাই, যাও ঘুরে এসো কোথাও। মানুষদের সাথে মিশতে শেখো। এসবে ও কান দেয়না। "


আমি আন্টির কথা শুনলাম মনোযোগ দিয়ে। শেষে একটা প্রশ্ন করে বসলাম,


"আচ্ছা আন্টি, আমাকে একটা কথা বলুন আগে। ও কি কারো সাথে মিশতে চায়না নাকি কারো সাথে মিশতে পারেনা? ও কি মেন্টালি মানুষকে ভয় পায়? এইরকম কিছু আপনার মনে হয়?"


আন্টি বললো, "এটা ঠিক বলতে পারলাম না বাবা। শুধু জেনে রাখো, আমরা চেষ্টার কোনো কমতি করিনি। সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাতে বলেছিলাম ওর বাবাকে। ওর বাবা রাজিও হয়েছিলো ওকে নিয়ে যেতে। কিন্তু মাসুদ যেতে চায়না। ওর যুক্তি হলো, সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাতে নিয়ে গেলে লোকজন তাকে নাকি পাগল বলবে! হাজারবার বুঝিয়েও কাজ হয়নি"


আমি যা বুঝার বুঝে ফেলেছি। উঠে পড়লাম।


"আন্টি আসি তাহলে!"


"বাবা! তোমার কাছে একটাই অনুরোধ, ওকে একটু মিশতে শেখাও বাইরে। আর তুমি যদি এরকম বাসায় এসে ওকে প্রায়ই বুঝাও, ও হয়তো বুঝবে! দোহাই লাগে বাবা, ওকে একটু সময় দিও।"


আন্টি আবার চোখ মুছলো।একজন মা সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে কতটা টেনশন করে, সেটা আমার অজানা না থাকলেও এই চোখের পানি, আমাকেও বিচলিত করে দিলো কিছুটা। মাসুদ এখনও তার রুমে। ওর বাসা থেকে বিদায় নেয়ার আগে আরেকবার ওর রুমে ঢু মারলাম।


দেখি, কি যেনো আকঁছো।


"কাকে আকছো?"


"ভ্যানগগকে"


"ইনি কে?"


"একটু আগে যার কাটা কান হাতে দেখে ছবি দেখে তুমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলে!"


"আচ্ছা, ইনি কে?"


"মহান চিত্রশিল্পী"


"কান কাটা ছবি এঁকেছো কেনো? উনি কি আসলেই নিজের কান কেটেছিলেন এভাবে?


"জানিনা"


বুঝলাম সে হয়তো বিরক্ত হচ্ছে। জানলেও হয়তো বলছে না। আমি আর ওকে বিরক্ত করলাম না। বিদায় নিয়ে চলে এলাম।


এই যে হলো শুরু, এর পর থেকে মাসুদের বাসায় আমি প্রায়ই যেতাম। মাসুদকে বোঝার চেষ্টা করতাম। যতবারই ওর বাসায় গিয়েছি, মাসুদের পৃথিবীর মত এই মহান রুম টাকে দেখতাম। প্রতিবারই ওর রুম এ যেয়ে নতুন নতুন ভাবে মাসুদ কে আবিষ্কার করছিলাম।


স্কুলেও তখন তার পাশে বসা শুরু করলাম। কলেজ শেষ করে প্রায়ই ওর রুমে যেতাম।একদিন কলেজ শেষ করে ওর রুমে গেলাম। রুমে ঢুকেই চোখে পড়লো, তার বিছানায় একটা অর্ধ উলঙ্গ মেয়ের অসম্পূর্ণ ছবি। আমি বললাম, এটা কি আঁকা শেষ? বললো, এখন ও বাকি আছে।


আমার সামনেই বসে পড়লো বাকি অংশ টা আঁকতে। আঁকা শেষ হলো এক ঘন্টার মাথায়। এরপর আমি দেখলাম, একজন ধর্ষিতাকে। এরকমভাবে একজন ধর্ষিতাকে তুলে ধরতে পারে যে সত্তা, সে সত্তা কোনো সাধারণ সত্তা নয়।


মাসুদকে জিগ্যেস করলাম, আচ্ছা মাসুদ, তুমি মানুষের সাথে মিশো না কেনো?


মাসুদ বললো, আমি মানুষকে ভয় পাই।


কেনো ভয় পাও?


মাসুদ জবাব দিলো না।


আমি আবার জিগ্যেস করলাম, "সামজিকতা ভয় লাগে তোমার? তোমার এত সুন্দর চিত্রকর্ম, এত জ্ঞানের ভান্ডার, নিজেকে সমৃদ্ধ করা, তোমার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, জীবনবোধ - এগুলা মানুষ জানুক, তুমি কি চাও না? তুমি কি জানো, এগুলো ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশ তোমাকে চিনতে শুরু করবে। "


মাসুদ শুধু একটা কথা বললো, "আমি মানুষকে ভয় পাই।"


আমি আর কথা বাড়ালাম না।


সেদিনই আবার নতুন রুপে মাসুদকে নতুন করে আবিষ্কার করলাম। কবি মাসুদ কে। কি উপমা, কি তেজ, কি শব্দ ভান্ডার।


হায় খোদা! এমনও মানুষ হতে পারে?


আবার চমৎকার করে আবৃত্তি করে শোনালো তার নিজের একটা কবিতা আর জীবনানন্দের একটা কবিতা।


জিগ্যেস করলাম,


"আচ্ছা, মাসুদ, তোমার কাছে জীবন মানে কি?"


উত্তর দিলো, "অর্থহীনতা। জীবন টা আমার কাছে পুরোপুরি অর্থহীন। আমি রোজ ছবি আঁকি, কবিতা লিখি, আর এই অর্থহীনতা কে উপলব্ধি করি।"


পরিদিন আবার মাসুদের রুমে গেলাম। ওর পরিবারের সবার সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। যখন তখন মাসুদের রুমে যাই, ওর কার্যকলাপ দেখি।


বই নিয়ে ওর আলাপ শুনি। বড় বড় সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী, মনিষী সম্পর্কে ওর নানা কথা দৃষ্টিভঙ্গি দেখি।


আমাকে ভাবতে শিখিয়েছিলো মাসুদ, জীবনকে দেখতে শিখিয়েছিলো সে। যে একটা রুমের মধ্যে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে পৃথিবী থেকে দূরে থাকতো, সে মানুষটাই আমাকে পৃথিবীকে নতুন করে দেখতে শেখালো।


একদিন নিজের বাসায় শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম কিছু একটা। হঠাৎ প্রথম দিন যে ভাবে মাসুদের রুমে গিয়েছিলাম, সে কথা মাথায় এলো। আমরা মানুষকে বাইরে থেকে দেখে কতটা চিনি? একটুও না।


সেদিন সে আমাকে নতুন ভাবে মানুষকে দেখতে শিখিয়েছিলো। মাথা টা ব্যাথা করছিলো ভীষণ। এক কাপ কফি বানিয়ে একটু চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলাম।


হঠাৎ, ওই কান কাটা ছবিটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। কি বিভৎস ছবি! একটা মানুষ তার একটা কান কেটে হাতে ধরে আছে, এই বিভৎস একটা ছবি সে আঁকলো কি করে? এত সুন্দর করে একে বিভৎস কে ব্যাখ্যা করা যায়?


কিজানি নাম বলেছিলো! হ্যা ভ্যানগগ। ভিনসেন্ট ভ্যানগগ।


পরদিন এই প্রসঙ্গ তুললাম।


সে বললো,


"ভিনসেন্টকে, মানসিক অস্থিরতা তাকে বেশ ভুগিয়েছিলো। প্রেমিকাকে কাটা কান উপহার দিয়েছিলো সে, যে প্রেমিকা তার কোনো এক সময় কানকে সুন্দর বলেছিলো! মানসিক রোগীও ছিলো বেশ একটা সময়! সুইসাইড করেছিলো মানসিক যন্ত্রনা সইতে না পেরে।"


ভ্যানগগের এই কাটা কান ইতিহাস জেনে ও কল্পনা করে এরকম বিভৎস একটা ছবি এঁকেছে, সেটাও বুঝলাম ওর কথায়।হায় আল্লাহ! মানসিক যন্ত্রনা একট মানুষকে কতটা পোড়াতে পারে? আরো অনেক কিছু জানতে পারলাম।


মাসুদ আমার কাছে একটা পৃথিবী সমান ছিলো। কখনো তাকে মানসিক রোগী ভাবতাম। কখনো ভাবতাম মহৎ সত্তা। এভাবে দীর্ঘ সময় আমি ওকে বোঝার চেষ্টা করলেও কোনো চেষ্টারই উপসংহারে পৌঁছাতে পারিনি।


এক ছুটির সকালের ঘটনা। ওর বাসায় গেলাম।যেতেই যা জানতে পারলাম, সেটা শুনে আমার পায়ের তলায় ভুমিকল্প অনুভূত হওয়ার মত অবস্থা। মাসুদ সিলিং ফ্যানে সুইসাইড করেছে। ওর বাসায় প্রচুর লোকের ভীড়। ওর মায়ের কান্না ভেসে আসছে।


আমি এই বাসায় না ঢুকে নিজের বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটা দিলাম। মাসুদকে এভাবে দেখতে চাইনা। আমি মহৎ চিত্রশিল্পী মাসুদ কে মনে রাখতে চাই। যে একাগ্রচিত্তে শুধু কাজ করে গেছে। তার এই সব অমূল্য রেখে যাওয়া সম্পত্তি গুলো কি হয়েছিলো আমি জানিনা।


তবে, আমি এখনও তার প্রভাব থেকে বের হতে পারিনি। সে চলে যাওয়ার সাত বছর হয়ে গেলো। এখনও সুযোগ পেলেই আমি একাকিত্ব কে বেছে নেই। জীবনকে বুঝার চেষ্টা করি। জীবনকে বুঝতে গেলে, মাসুদ এসে পড়ে। এক মহান সত্তা কেনো মানুষকে ভয় পেতো জানতাম না । আমি পাবলো পিকাসো, ভ্যানগগকে শুধু ওর মুখেই শুনেছি অনেকবার।


এই জীবনে পরবর্তীতে প্রচুর মনিষীর জীবনী পড়েছি, তাদেরকে বোঝার চেষ্টা করেছি। তবু, মাসুদ আমাকে এখনও সবচেয়ে বেশি আলোড়িত করে।


মাসুদ হলো আমার ছুঁয়ে দেখা পাবলো পিকাসো, আমার নিজস্ব পৃথিবীর মহান ভিনসেন্ট ভ্যানগগ আর আমার খুব কাছের এক নিঃসঙ্গ সত্তা - জীবনানন্দ।


আমি চোখ বন্ধ করলে মাসুদ এখনও আবৃত্তি করে-


"আমি যাইনি ম'রে আজো, তবু কেবলি দৃশ্যের জন্ম হয়"


গল্প : তবু কেবলি দৃশ্যের জন্ম হয়

( অন্যরকম ঘরের আলাপ)


সোহায়েব বিন ইসলাম সিয়াম

Comments

Popular posts from this blog

বাংলাদেশের নাটক শিল্পের বর্তমান অবস্থা ও আমার দৃষ্টিভঙ্গি

নির্বাসন (ছোটোগল্প, লেখা : সোহায়েব বিন ইসলাম সিয়াম)